Monday, April 7, 2014

Photos from Scout's Squint

If you happen to pass by Ho Chi Minh Sarani on 13/14/15 April (3 PM - 7 PM on the 13th, and 1 PM - 7 PM on the 14th and 15th), do drop in at the Nandalal Bose Gallery at ICCR... 3 photographs by yours truly will be on display :)

Check out the club's website here

Wednesday, March 26, 2014

দেবীপক্ষ


একটা অর্ধসমাপ্ত ছাঁটা ফুলের আসন, কিছু পুজোর বাসন আর দু’টো ছবি ছাড়া আমার না-দেখা ঠাকুমার স্মৃতিবাহক কোনকিছুই ছোটবেলা থেকে দেখিনি। মহালয়ার ভোরে চলে যান ছোট-বড় নানান বয়সী সন্তানদের রেখে। শুনেছি শেষ অবধি জ্ঞান ছিল।
        মামারবাড়ি না গেলে দাদু-দিদা স্থানীয় কারুর আদর পেতাম না আর বন্ধুদের কাছে তাদের ঠাকুর্দা বা ঠাকুমা বা দু’জনেরই গল্প শুনতাম, তাই বোধ হয় একটা অভাববোধ কাজ করেছে বরাবর। তা ছাড়াও হয়ত না-দেখা মানুষকে ভালবাসা যায় সহজে। সব মিলিয়ে ঠাকুমার সম্পর্কে কৌতূহল ছোটবেলা থেকেই ছিল। তাই দেখতে চললাম ঠাকুমার বাপের বাড়ির দুর্গাপুজো।
        কোনদিন যে বাড়িতে যাইনি, সেই হাটখোলার দত্তবাড়িতে নিশ্চয়ই পুজো হয় জানতাম। তার বিবরণও পেয়ে গেলাম ইন্টারনেটে। ছোটবেলায় যে ম্যাটাডোর ভ্যানে স্কুল যেতাম তার কল্যাণে উত্তর কলকাতার অনেক অলিগলিই ছিল আমার নখদর্পণে। কোন ঠিকানা নিয়ে আলোচনা হলে তাই আমি প্রায়ই বলতাম, “এখানে তো আমার ভ্যান যায়।” বলা বাহুল্য সেই নিয়ে হাসাহাসি হ’ত বিস্তর। তা ইন্টারনেটে ঠিকানা দেখে মনে হল ৭৮ নিমতলা ঘাট স্ট্রীটের সামনে দিয়ে আমার ভ্যান যেত। অর্থাৎ একটা সময় প্রায় রোজ আমি ঠাকুমার বাড়ির সামনে দিয়ে যাতায়াত করেছি।
        বিডন স্ট্রীট ধরে হাঁটছি নিমতলা অভিমুখে। উদ্দেশ্য, পায়ে হেঁটেই দত্তবাড়ি পৌঁছনো, আর পথে কোন পুজো থাকলে দেখা, ছবি তোলা। নবমীর দুপুরের বৃষ্টি টিপটিপ থেকে ঝিরঝিরের দিকে এগোচ্ছে। তবু তার মধ্যেই নজর কাড়ে এক ‘থিমপুজো’প্রবেশপথে প্রকান্ড হাঁড়িকাঠে মাথা রাখা বৃহৎ কালো ছাগমূর্তি, আর মন্ডপসজ্জার  লাল-কালো-সবুজের ভাষায় পশুবলিবিরোধিতার বার্তা সুস্পষ্ট। ক্যামেরা চলল। প্রগতিশীল, আধুনিক... আমার মত অনেক দর্শনার্থীরই এই শব্দদুটি মাথায় এসে থাকবে। শারদসম্মানের দৌড়ে নির্ঘাৎ এগিয়ে এই পুজো। ঠিকানা দেখতে দেখতে একই রাস্তায় এগোতে থাকি সাবেকিয়ানার সন্ধানে।
        বৃষ্টিটা ক্রমশ ঝিরঝির থেকে ঝমঝমে পৌঁছেছে। তাড়াতাড়ি পা চালাতে চালাতে দেখি ছেষট্টির পর নব্বইয়ে পৌঁছে গেছি। ...তাহ’লে সাদা-কমলা কাপড় লাগানো ফটকটাতেই ঢোকা উচিত ছিল... কিন্তু যদি সেটাই আটাত্তর না হয়? একটু পিছিয়ে গিয়ে দেখি ঠাকুরদালানের দুর্গা ফটক থেকেই দৃশ্যমান। ঠিকানা ৭৮।
        ঠাকুরদালানে পুরোহিত, দুর্গা আর আমি ছাড়া কয়েকটা ভেজা শালিক। নিদ্রাত্যাগ করে অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন পুরোহিত। আমিও শ্রোতা পেয়ে বোঝাতে ব্যস্ত হয়ে যাই কেন এসেছি। বাড়ির সবাই তখন দুপুরের বিশ্রামে। সন্ধ্যের আরতির আগে কেউ নামবে না। জল থইথই করছে উঠোনে। জলের মধ্যে শালিক তিনটে খানিক পাগলামি করেই ফুড়ুৎ করে এসে বসছে আমার অল্প দূরেই। আবার উড়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকবার উড়ে এসে আমার আরেকটু কাছে বসছে। পাশে রাখা পেডেস্টাল ফ্যান, চেয়ার, হাঁড়িকুড়ির মতই কিছু ভাবছে আমাকে। নাকি ভাবছে আমি বাড়ির লোক? মন্দ নয়।
        উঠোনের চারপাশ ঘিরে বাড়ি। পুরোটা জুড়েই সবাই থাকেন। হঠাৎ একপাশ থেকে বেরিয়ে এল দু’টি মেয়ে। শাড়ি পরে ছাতা হাতে মোবাইলে কথা বলতে বলতে উঠে যায় বাইরে এসে দাঁড়ানো মারুতিতে। কাদা বাঁচিয়ে। ওদের হেঁটে যাওয়া, উঠোনের জমা জলে ওদের প্রতিবিম্ব— খুব ভালো দেখাচ্ছে। ছবি তুলব না। মাথার মধ্যে জলছবি জমা হতে থাক। আমার ঠিক কে হয় এরা? কল্পনা করার চেষ্টা করি ওদের মতই অভ্যস্ত পদক্ষেপে ওই উঠোন পেরিয়ে যাচ্ছেন ঠাকুমা। পারি না। যুক্তি বাধ সাধে। মনে পড়ে ওদের বয়সে ঠাকুমা রোজই শাড়ি পরতেন, তবে এ বাড়িতে নয়। এ বাড়ির ক’টা পুজোই বা দেখেছিলেন? ভাবতে ইচ্ছে করে ঘুরঘুর করা শালিক আর পায়রাগুলোও বংশানুক্রমে ওই বাড়ির বাসিন্দা, তাদের পুর্বপুরুষদের সঙ্গে ঠাকুমার পরিচয় ছিল। কে জানে। খুব আশা করতে থাকি বাড়ির যে কর্তার সঙ্গে দেখা হওয়ার আশ্বাস পেয়েছি বংশলতিকা তাঁর কন্ঠস্থ, বাবার দাদামশাইয়ের নাম বললেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।
        ততক্ষণে পুরোহিত আমায় দু-কাপ চা খাইয়ে দিয়েছেন। বাড়ির কর্তা এসে পরিচয় দিয়ে স্বভাবসিদ্ধভাবে পুজো নিয়ে কিছু কথা বললেন, তাতে বুঝলাম দূরাত্মীয়দের আগমনে এঁরা অভ্যস্ত। বংশলতিকা নিয়ে বেশি বলতে পারলেন না তবে নেমন্তন্ন করলেন কালীপুজোর আর এগিয়ে দিলেন রাস্তা অবধি। বেরোতে বেরোতে পুজোর আচার নিয়ে কথা হতে থাকল।
-     -- রথের সময় থেকে দুর্গাপ্রতিমা তৈরী হয় ঠাকুরদালানে। অষ্টমীর দিন সিঁদুরখেলা হয়।
-     -- আচ্ছা, বলি হয়?
-     -- হ্যাঁ, হয় তো। ক্ষীরের আকৃতি বলি দেওয়া হয়।
-     -- তাই? দারুণ তো!
-     -- বলি দেখতে পাবেন না কিন্তু। পুরোহিত দেখেন শুধু। যেমন হয়ে আসছে আর কি।

    বৃষ্টি থেমেছে। হেঁটে ফিরতে ফিরতে দেখি পশুবলিবিরোধী আধুনিক বারোয়ারীর কাছে দর্শনার্থীদের ভিড় জমেছে। মাইকে ব্যাখ্যা ভেসে আসছে পুজোর থিমের অভিনবত্ব ও সময়োপযোগিতার।


TEXT © DURBA BASU